রক্তস্বল্পতা কী
চিকিৎসাবিজ্ঞানের পরিভাষায় যখন আমাদের শরীরে প্রয়োজনের তুলনায় কম রক্ত থাকে তাকে রক্তস্বল্পতা বা অ্যানিমিয়া বলে। রক্তস্বল্পতায় আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে লাল রক্তকণিকা ও হিমোগ্লোবিনের ঘাটতি থাকে। আমাদের রক্তে পর্যাপ্ত হিমোগ্লোবিনের অভাব থাকলে শরীর সঠিক পরিমাণে অক্সিজেন পায় না। এতে ঠান্ডা অনুভূত হয়, ক্লান্তি বা দুর্বলতার লক্ষণগুলোও প্রকাশ পায়।
রক্তস্বল্পতার কারণ
অনেক কারণে রক্তস্বল্পতা বা অ্যানিমিয়া হতে পারে, অন্যতম কয়েকটি কারণগুলো হলোঃ
১) পেটের আলসার থেকে রক্তক্ষরণ হলে।
২) হেমোরয়েডস/পাইলস রোগের কারণে রক্তক্ষরণ হলে।
৩) মেয়েদের ক্ষেত্রে মাসিকের সময় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হলে।
৪) শরীরে ভিটামিন ও আয়রনের ঘাটতির কারণে।
৫) পর্যাপ্ত আয়রন ছাড়া খাদ্য গ্রহণ করলে, বিশেষ করে শিশু, কিশোর এবং নিরামিষাশীদের মধ্যে রক্তস্বল্পতা হয়।
৬) ঘনঘন ক্যাফেইনযুক্ত পানীয় পান করলে।
৭) দীর্ঘস্থায়ী অসুখ যেমন: ক্যান্সার, কিডনি রোগ, ডায়াবেটিস এর কারণেও হিমোগ্লোবিন কমে রক্তস্বল্পতা হতে পারে।
8) বার্ধক্যজনিত কারণেও অনেক সময় শরীরে রক্তস্বল্পতা দেখা দেয়।
রক্তস্বল্পতার লক্ষণ
রক্তস্বল্পতা দেখা দিলে ক্লান্ত লাগবে, ত্বক ফ্যাকাসে হবে, হাত-পা ঘনঘন ঠান্ডা হয়ে যাবে। এছাড়া, বুক ব্যথা, শ্বাস নিতে সমস্যা, হৃৎস্পন্দন বেড়ে যাওয়াও এর লক্ষণ।
রক্তস্বল্পতার চিকিৎসা
১) সাধারণত কারণ ও ধরন দেখে অ্যানিমিয়ার চিকিৎসা করা হয়। যদি ভিটামিনের অভাবে রক্তাল্পতা দেখা দেয় তবে চিকিৎসকরা ভিটামিন সমৃদ্ধ ডায়েট গ্রহণের পরামর্শ দেন।
২) কিছু ক্ষেত্রে, ডাক্তার ভিটামিন বি ১২-এর ঘাটতি কাটাতে রোগীদের ইনজেকশন নেওয়ারও পরামর্শ দেন। যদি আয়রনের ঘাটতিজনিত কারণে রক্তস্বল্পতা দেখা দেয় তবে রোগীর ডায়েটে আয়রন সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণের পরামর্শ দেওয়া হয়।
৩) মাসিকের সময় বেশি রক্ত যাওয়ার অন্যতম কারণ জরায়ুতে থাকা ফাইব্রয়েড, যা অনেক সময় অপারেশন করার প্রয়োজন হয়।
৪) অ্যাপ্লাস্টিক অ্যানিমিয়ার চিকিৎসার জন্য চিকিৎসক রোগীদের রক্ত সঞ্চালনের পরামর্শ দেন। অস্থিমজ্জার সঙ্গে সম্পর্কিত অ্যানিমিয়া কেমোথেরাপি, অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে চিকিৎসা করা হয়।
৫) গুরুতর রক্তস্বল্পতা প্লীহা অপসারণের কারণেও হতে পারে। গুরুতর ক্ষেত্রে, রক্তের বিনিময় বা কৃত্রিম ইরাইথ্রোপয়েটিন পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়। এটি এক ধরনের হরমোন যা লাল রক্তকনিকা উৎপাদনে সাহায্য করে।
রক্তস্বল্পতা কাটাতে কী খাওয়া উচিত
অ্যানিমিয়া দেখা দিলে বেশি করে পালং শাক, সয়াবিন, বিট, লাল মাংস, চিনাবাদাম, মাখন, টমেটো, ডিম, বেদানা, সিরিয়াল, বীজ জাতীয় খাবার, শুকনো ফল, সামুদ্রিক খাবার, আপেল, খেজুর ইত্যাদি খেলে আয়রনের ঘাটতি দ্রুত পূরণ হবে। অ্যানিমিয়া রোগীদের ট্যানিন জাতীয় খাবার যেমন কফি, গ্রিন টি, ব্ল্যাক টি, আঙুর, দই, দুধ, পনির এড়িয়ে চলা উচিত।
রক্তস্বল্পতা বা এনেমিয়া কী? কারণ, লক্ষণ, ও চিকিৎসা
স্বাস্থ্য কথা